রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৭ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনার প্রকাশ্যে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বীকারোক্তি জবানবন্দির প্রতিবাদ জানিয়েছেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি বলেছেন, মিন্নি এই হত্যাকাণ্ডোর সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ‘নির্যাতন ও জোরজবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’ তাঁকে একটি মহল ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে তারা স্থানীয় এমপি শম্ভু বাবুর ছেলে মাদক সম্রাট সুনাম দেবনাথকে বাঁচানোর জন্য তারা এই খেলায় মেতে উঠেছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৫ দিনের রিমান্ড পূর্ণ না করেই কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় মিন্নিকে।এসময় আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের পাশাপাশি উৎসুক জনতাও ভিড় জমান। আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেনও।
ওইদিন সন্ধ্যায় আদালত প্রাঙ্গণে মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেন, ‘ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার মেয়ের কাছ থেকে সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি কোনোভাবেই জড়িত নয়।’
আপ্লুত কণ্ঠে মোজ্জাম্মেল হোসেন বলেন, ‘মেয়ে আমার জীবন বাজি রেখে জামাইকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে? এটাই কি তার অপরাধ?’
এর পর তিনি বলেন, ‘এসব কিছুই শম্ভু বাবুর (ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু) খেলা। তার ছেলে মাদক সম্রাট সুনাম দেবনাথকে বাঁচানোর জন্য আমার মেয়েকে বলি দেয়া হচ্ছে।’
এদিকে জবানবন্দির পর আদালত থেকে বের করে ছোট পিকআপে তোলার সময় মিন্নি কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু পাশে থাকা নারী পুলিশ সদস্য এ সময় তার মুখ চেপে ধরেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘মিন্নি মা, মিডিয়ার সাথে কথা বল, তোকে নির্যাতন করা হয়েছে, আপনারা ওরে কথা বলতে দেন। আমার মেয়েকে জোর করে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। আমার মেয়ে অসুস্থ, প্লিজ ওকে নির্যাতন করবেন না।’
তিনি চিৎকার করে আরও অভিযোগ করেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। গতকাল রাতে একজন পুলিশ সদস্য বাসায় এসে মিন্নির চিকিৎসাপত্র নিয়ে গেছেন। আর আজ আচমকা তাকে আদালতে হাজির করা হলো! আমার মেয়েকে জোর জবরদস্তি ও নির্যাতন করেই এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে আইনজীবীরা আসবে শুনে পুলিশ নির্যাতন করে তড়িঘড়ি আমার মেয়েকে দিয়ে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আমার মেয়েকে গ্রেফতার করে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এখন আবার তাকে দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করানো হলো। এর মাধ্যমে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে।
মিন্নির বাবা আরও বলেন, আমি আইনি লড়াই করে সত্যটা বের করব ইনশাল্লাহ।
এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার ছেলের ওপর মিন্নির বাবার এমন গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে শম্ভু দেবনাথের ছেলে সুনার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিন্নির বাবা কী বলছে, আমি সেটা জানি না। তবে এ ধরনের অভিযোগ মিথ্যা ও অমূলক। এ বিষয়ে আমি কিংবা আমার পরিবারকে পেঁচিয়ে মন্তব্য করা মূর্খ লোকের কাজ। তবে আমার যেটা মনে হচ্ছে, আমাদের বিরোধী চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’
গত মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় মিন্নিসহ এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ২ জুলাই ভোরে মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন জানিয়েছেলেন, মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় পুলিশ তাকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। সেদিন তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
Leave a Reply